ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন কিভাবে করবেন জানুন

যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখে ভুল থাকে তাহলে খুব সহজেই এটি সংশোধন করে নিতে পারবেন? এই লেখাটিতে ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

অনেক সময় আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ ভুল থাকে। যদি এই ভুলগুলো সংশোধন করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে আরো অনেক বড় ঝামেলার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ ভুল থাকে তাহলে দ্রুত সংশোধন করে নিবেন।

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ ভুল সংশোধনের জন্য অবশ্যই উপযুক্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরনো নাগরিকরা ভোটার আইডি কার্ড করার সময় উপযুক্ত ডকুমেন্টস না থাকায় জন্ম তারিখ ভুল প্রদান করেছে, এবং সেই ভুলটি আপনার ভোটার আইডি কার্ডে বিদ্যমান রয়েছে।

এছাড়াও অনেক সময় কর্মকর্তাদের অসচেতনার কারণে আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখে ভুল হয়। অনেকে অতি দ্রুত নাগরিক সেবা উপভোগ করার জন্য জন্ম তারিখ বাড়িয়ে দিয়ে অন্যান্য ডকুমেন্টস এর থেকে জন্ম তারিখ আলাদা করে ফেলে, যা পরবর্তীতে বড় সমস্যার কারণ।

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন পদ্ধতি

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে আপনার একাউন্ট লগইন করে, Profile থেকে Edit অপশনে গিয়ে সঠিক জন্ম তারিখ উল্লেখ করুন। অথবা NID কার্ড সংশোধন ফর্ম ১৩ পূরনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করুন।

সাধারণত আপনারা ২টি পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ভুল থাকা জন্ম তারিখ সংশোধন করতে পারবেন। প্রথমত হল সংশোধন ফর্ম ১৩ পূরণ করে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিয়ে। এবং দ্বিতীয়ত হল services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংশোধন আবেদন করে।

তবে ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য অবশ্যই সঠিক জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকা গ্রহণযোগ্য ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। এটা হতে পারে – একাডেমিক সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট ইত্যাদি।

এই সকল ডকুমেন্টগুলো থেকে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখে যদি 5 থেকে 10 বছরের মধ্যে হয় তাহলে আপনার জন্ম তারিখ সংশোধনে একটু বাগ পেতে হতে পারে। বিশেষ করে আপনার আবেদনটি দীর্ঘদিন পেন্ডিং থাকতে পারে অথবা আবেদনটি বাতিল করা হতে পারে।

যেহেতু এই সময়টা অনেক বড় একটি সময়, তাই যদি আপনার আবেদনটি পেন্ডিং থাকে অথবা বাতিল করে দেয় তাহলে একটু নির্বাচন কমিশন অফিসে খোঁজ নিবেন, এবং তাদেরকে এই সম্পর্কে অবগত করবেন। নির্বাচন অফিসে গিয়ে বারবার তলব করবেন।

দীর্ঘ সময়ে বয়সের পার্থক্য থাকলে, এই সকল আবেদনের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফর্ম ১৩ পূরণের মাধ্যমে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন করা শ্রেয়। এছাড়াও এই সকল আবেদনের ক্ষেত্রে একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ উভয় ডকুমেন্টস প্রদানের চেষ্টা করবেন।

জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন

সাধারণত ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য, সঠিক জন্ম তারিখ উল্লেখ করা আছে এমন জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং একাডেমিক সার্টিফিকেট (JSC, SSC, HSC) প্রয়োজন। এছাড়াও চেয়ারম্যানের কর্তৃক প্রাপ্ত প্রতয়ন পত্র ও ইউটিলিটি বিলের কপি প্রয়োজন হতে পারে।

এবং পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের কপি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হলফনামা, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জমির দলিল প্রয়োজন হতে পারে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে অন্যান্য ডকুমেন্টস এর থেকে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখের ডিফারেন্স। এবং আপনি শিক্ষিত না শিক্ষাবিহীন এর উপরে।

বিবাহিত হলে – বৈবাহিক কাবিননামা প্রয়োজন হবে। চাকরিজীবী হলে MPO/ সার্ভিস বই/ চাকরির ইমপ্লয়ার আইডি প্রয়োজন হবে। এছাড়াও সকল ভাই-বোনদের এনআইডি কার্ডের কপি প্রয়োজন হতে পারে।

অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম তারিখ সংশোধন

অনলাইনে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। nidw ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করা থাকলে নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে নিবেন। যদি একাউন্ট করা না থাকে তাহলে নতুন একাউন্ট খুলে নিবেন।

তারপরে আপনার অ্যাকাউন্টটি লগইন করে প্রোফাইল অপশনে আসুন। এখান থেকে এডিট অপশনে গিয়ে, পূর্বের জন্ম তারিখের জায়গায় সঠিক জন্ম তারিখ প্রদান করে জন্ম তারিখ সংশোধনের পর্যাপ্ত কারণ উল্লেখ করুন।

তারপরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর স্ক্যান কপি আপলোড করুন এবং সংশোধন আবেদন ফি পরিশোধ করে আবেদনটি সাবমিট করুন। তারপরে আবেদনের কপি ডাউনলোড করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন।

অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।

নির্বাচন অফিস থেকে জন্ম তারিখ সংশোধন

আপনারা চাইলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ অন্যান্য ডকুমেন্টস এর থেকে বেশি পার্থক্য থাকে তাহলে আমি সাজেস্ট করবো সরাসরি নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশোধনী আবেদন করবেন।

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন
  • প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র বা তথ্য সংশোধন ফরম -২ ডাউনলোড করুন অথবা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করুন।
  • তারপরে ফর্মের জন্মতারিখ (চ) এর জায়গায়, “বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র বা সংরক্ষিত তথ্য উপাত্তে বিদ্যমান তথ্য” এই অপশনে আপনার বর্তমান জন্ম তারিখ বসিয়ে দিন।
  • এবং “চাহিত সংশোধিত তথ্য” এই অপশনে আপনার সঠিক জন্ম তারিখ বসিয়ে দিন।
  • তারপরে বয়স সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো ফর্মের সাথে সংযুক্ত করবেন।
  • এবং ফর্মে থাকা অন্যান্য সকল তথ্য পুরন করবেন।
  • তারপরে ব্যাংকে গিয়ে এ চালানোর মাধ্যমে অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করুন।
  • সর্বশেষে ফর্মটি আপনাদের উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন।

ফরম পূরণের ক্ষেত্রে ঝামেলা মনে হলে নির্বাচন অফিসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন। অথবা ই-সেবা প্রদান করে এমন কম্পিউটার দোকান থেকে ফরম পূরণ করে আনতে পারেন। তবে এজন্য অবশ্যই চার্জ প্রযোজ্য হবে।

সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড

জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন করার পরে ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আশা করা যায় এর মধ্যে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সংশোধন সম্পূর্ণ হবে। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পন্ন হওয়ার পরে ১০৫ নাম্বার থেকে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দিবে।

তারপরে অনলাইন থেকে সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। যদি ১০ থেকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে আপনার ভোটার আইডি কার্ডটি সংশোধন না হয় তাহলে নির্দিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন।

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনটি “তথ্য সংশোধন” এর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করতে ২০০ টাকা সংশোধন ফি এবং ৩০ টাকা ভ্যাট (15%) – মোট ফি’র পরিমাণ ২৩০ টাকা।

তবে আপনারা যদি ভোটার আইডি কার্ডের সাথে অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করেন, তাহলে আবেদন ফি বৃদ্ধি পাবে। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে জেনে নিতে পারেন।

ভোটার আইডি কার্ডের বয়স সংশোধন করতে কতদিন লাগে

সাধারণত কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভোটার আইডি কার্ডের বয়স সংশোধন হয়। “ক” ক্যাটাগরির আওতায় সংশোধনের বয়স ৩ বছরের মধ্যে হলে ৭ দিন সময় লাগে। “খ” ক্যাটাগরির আওতায় সংশোধনের বয়স ৫ বছরের মধ্যে হলে ১৫ দিন সময় লাগে।

“গ” ক্যাটাগরির আওতায় সংশোধনের বয়স ৫ বছরের বেশি হলে (মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সরকারি চাকরির বয়স, ভোটার যোগ্যতা এবং বয়স্কভাতা নেয়ার বয়স সীমা বাদে) ৩০ দিন সময় লাগে। এবং “ঘ” ক্যাটাগরির আওতায় সকল ক্ষেত্রে ৫ বছরের বেশি হলে ৪৫ দিন সময় লাগে।

শেষকথা

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আশা করি ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি সংশোধনের জন্য আবেদন করার অনেকদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন ধরনের রিপ্লাই না পান, সেক্ষেত্রে দ্রুত উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন।

FAQs

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে?

সাধারণত সকল ডকুমেন্টস সঠিকভাবে আপলোড করে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করলে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে।

অনলাইনে আবেদন করার পরে আবেদনকপি ডাউনলোড করা প্রয়োজন?

অবশ্যই প্রয়োজন, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করার পরে অনলাইন আবেদন কপি ডাউনলোড করে রাখবেন। পরবর্তীতে আপনাকে ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডাকা হলে আবেদনকপি প্রয়োজন হবে।

Similar Posts

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments