ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩

অনেকেই ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন কিংবা পরিবর্তন করতে চান। তবে সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ার ফলে অনলাইন থেকে বিভিন্নভাবে আবেদন করে নাম পরিবর্তন করতে পারেন না। এই লেখাটিতে মূলত ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এই লেখাটিতে আলোচিত পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজেই আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন করতে পারবেন। একজন নাগরিকের জন্য ভোটার আইডি কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নামে ভুল থাকে সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব নামটি সংশোধন করা উচিত।

চলুন জেনে নেই ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম এবং ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন। আজকের লেখাটি একটু ভিন্ন ধরনের হবে। সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করার জন্য মূলত ম্যানুয়াল ভাবে নির্বাচন কমিশন অফিস বরাবর একটি আবেদন করতে হবে। এবং আবেদনের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস উপরের শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে জমা করতে হবে।

অনেকেই অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন বা সংশোধনের পদ্ধতি দেখায়, তবে আপনি যদি অনলাইন থেকে এই কাজটি করেন সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন হবে। আইডি কার্ডে থাকা আপনার সিগনেচার/স্বাক্ষর পরিবর্তন হবে না।

মনে করেন আপনার নাম ভোটার আইডি কার্ডে দেয়া আনোয়ার হোসেন, কিন্তু আপনি পরিবর্তন করে নামটি দেলোয়ার হোসেন দেয়ার চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি অনলাইনে আবেদন করেন তাহলে আনোয়ার হোসেন পরিবর্তন হয়ে দেলোয়ার হোসেন হবে তবে স্বাক্ষরে নাম আনোয়ার হোসেন থেকে যাবে।

সিগনেচার বা স্বাক্ষর পরিবর্তন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ম্যানুয়াল ভাবে আবেদন করতে হবে। অনলাইন থেকে আবেদনের পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাম সংশোধনের আবেদনটি নির্বাচন কমিশন থেকে রিজেক্ট করে দেওয়া হয়।

এর একমাত্র কারণ হলো সংশোধিত নাম ও সিগনেচার এক না থাকা। তাই আমি আপনাদের সাজেস্ট করবো একটু কষ্ট করে সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ আইডি কার্ডের নাম সংশোধনী আবেদন করুন।

এছাড়াও বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ডের অফিসিয়াল সার্ভার থেকে কোন ধরনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমাদের ম্যানুয়াল ভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করতে কি কি প্রয়োজন

ভোটার আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তনের কারণ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি কেন ভোটার আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন করতে চান তার উপরে।

এবং আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে উপস্থিত হওয়ার আগে ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহ করে নিবেন। চলুন জেনে নেই ভোটার আইডি কার্ডের সংশোধনের কারণ অনুযায়ী কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন।

সার্টিফিকেটের সাথে এনআইডি কার্ডের মিল না থাকলে

আপনার এডুকেশন সার্টিফিকেট এর সাথে যদি এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের নামের মিল না থাকে কি করবেন? অনেকের মাদ্রাসা বোর্ড কিংবা বিভিন্ন স্কুল বোর্ডের সার্টিফিকেটের নামের সাথে এনআইডি কার্ডের নামের মিল নেই। এক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের নাম অনুযায়ী এনআইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন করতে হবে।

এক্ষেত্রে যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবেঃ

  • আপনার সকল এডুকেশনাল সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।
  • এখনো অধ্যায়নরত থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক একটি প্রত্যয়ন পত্র।
  • এরপরে আপনার অনলাইন জন্ম সনদ।
  • আপনার বাবার ওয়ারিশ সনদ বা সার্টিফিকেট।
  • চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হলফনামা।
  • আপনার অন্যান্য সকল ভাই বোনের জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি অথবা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।

এছাড়াও আপনার নাম প্রমাণের জন্য যদি অন্য কোন ডকুমেন্টস থাকে তা সংযুক্ত করে দিবেন। ডকুমেন্টস গুলো ফটোকপি করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো যেন স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। পরবর্তীতে একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা (বিসিএস ক্যাডার) দ্বারা এই ডকুমেন্টগুলো সত্যায়িত করতে হবে।

ছেলে মেয়ের সার্টিফিকেট অনুযায়ী এনআইডি কার্ডের নাম সংশোধন

যদি এমন হয়, আপনার ছেলে মেয়ের সার্টিফিকেটে আপনার নাম আলী হোসেন রয়েছে এবং আপনার ভোটার আইডি কার্ডে আপনার নাম কামাল হোসেন রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন করতে হবে।

এক্ষেত্রে যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবেঃ

  • আপনার ছেলে-মেয়ের সকল সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।
  • তারা যদি ভোটার হয়ে থাকে তাহলে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও অনলাইন জন্ম নিবন্ধন।
  • আপনার নিজের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
  • নাম পরিবর্তনের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হলফনামা।
  • এরপরে চেয়ারম্যান অথবা মেম্বারের কাছ থেকে একটি নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করে নিবেন।

এই ডকুমেন্টগুলো সুন্দরভাবে ফটোকপি করে একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে, নির্বাচন কমিশন অফিসে ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধনের লক্ষ্যে জমা করতে পারেন।

পাসপোর্ট ও জমির দলিল অনুযায়ী এনআইডি কার্ডের নাম সংশোধন

যদি আপনার জমির দলিল বা পাসপোর্ট এর নামের সাথে এনআইডি কার্ড এর নামের মিল না থাকে তাহলে, এনআইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করতে হবে।

এক্ষেত্রে যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবেঃ

  • পাসপোর্ট অথবা জমির দলিলের ফটোকপি।
  • আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
  • নাম পরিবর্তনের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হলফনামা।
  • বিবাহিতদের ক্ষেত্রে নিকাহনামা বা কাবিননামার ফটোকপি।
  • ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের এডুকেশনাল সার্টিফিকেট, ভোটার আইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ।
  • এরপরে চেয়ারম্যান অথবা মেম্বারের কাছ থেকে একটি নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করে নিবেন।

উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো ক্লিয়ার ভাবে ফটোকপি করে একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা তথা বিসিএস ক্যাডার দ্বারা সত্যায়িত করে, নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে।

আমাদের শেষকথা

আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তনের কারণ অনুযায়ী ডকুমেন্টগুলো নিয়ে, একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে, সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে উপস্থিত হয়ে ম্যানুয়ালি নাম ও স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হবে।

আশা করি এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুব সহজেই আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবেন। এছাড়া অনলাইন থেকে শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করা যাবে, স্বাক্ষর পরিবর্তনের কোন সিস্টেম নেই।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আশাকরি ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ভোটার আইডি কার্ড সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।

Similar Posts

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments